অদ্ভুত কাঁকড়া

রাক্ষুসে কাঁকড়ার চেহারিটি তেমন কিছু ভীষণ নয়, গায়ের রংটিও বেশ সুন্দরই বলতে হবে— তবে একে রাক্ষুসে বলা হচ্ছে কেন? 'রাক্ষুসে' বলার একমাত্র কারণ হচ্ছে তার দেহের আয়তনটি। খুব বড় একটা রাক্ষুসে কাঁকড়ার বড় দুটি দাঁড়া ফাঁক করিয়ে তার এক আগা থেকে আর এক আগা পর্যন্ত মাপ নিয়ে দেখা গেছে, দশ বার হাত লম্বা। এটা হল কর্তা-কাঁকড়ার কথা— তাঁর গিন্নী যে কাঁকড়ি, তাঁকে ত আর যখন তখন লড়াই করতে হয় না, কাজেই তাঁর অত বড় দাঁড়াও নেই।

এই কাঁকড়া থাকে জাপান দেশে সমুদ্রের জলে। সেইখানে কূলের কাছে সমুদ্রের শেওলা-ধরা পাথরের মধ্যে রাক্ষুসে কাঁকড়া গা-ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে থাকে। নামটি রাক্ষুসে হলেও এদের স্বভাবটি মোটেও রাক্ষসের মতো নয়— সেইজন্য নানা জাতীয় মাছ আর অক্টোপাস প্রভৃতি জলজন্তু এদের দেখতে পেলেই তেড়ে খেতে আসে। নানারকম শেওলা প্রবাল আর 'স্পঞ্জ' তার গায়ের উপর বাসা ক'রে তার আসল চেহারাটিকে এমন বেমালুম ঢেকে রাখে যে, খুব কাছে গেলেও অনেক সময় তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়।

আরও কতগুলি কাঁকড়া রয়েছে, যেগুলিকে গেছো কাঁকড়া বলা যায়। এরা সত্যি সত্যি গাছে চড়ে কিনা তা নিয়ে আগে নানারকম তর্ক শোনা যেত; কিন্তু এখন এটা একেবারে সত্য বলে প্রমাণ হয়েছে। তবে এরা যে নারকেল গাছের আগায় চড়ে ডাব পেড়ে আনে, এ কথাটা অনেক সময় শোনা গেলেও এর কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। যা হোক, অল্পই উঠুক আর বেশিই উঠুক, ডাব পাড়ুক আর নাই পাড়ুক গাছে চড়া আর নারকেল খাওয়া এই দুই বিদ্যাতেই এর বেশ বাহাদুরি আছে। প্রশান্ত মহাসাগরের কতগুলি ছোট ছোট দ্বীপে এই কাঁকড়ার বাড়ি। সেখানে নারকেল গাছের অভাব নেই, নারকেল মাটিতে পড়লেই গেছো কাঁকড়া তাকে আক্রমণ করে। প্রথমত সে নারকেলটার ছোব্‌ড়া ছাড়িয়ে নেয়— এই ছোব্‌ড়া তাদের গর্তে বিছাবার জন্য দরকার হয়। তারপর যেদিকে নারকেলের 'চোখ' থাকে, সেইদিকে দাঁড়া দিয়ে ঠুকে গর্ত করে সেই গর্তের মধ্যে দাঁড়া ঢুকিয়ে খুব মজা করে খায়। আস্ত নারকেলটিকে যে দাঁড়া দিয়ে ভাঙতে পারে— তার দাঁড়ার একটি চাপটে এ মানুষের হাড় পর্যন্ত ভেঙে দেয় সেটা কিছুই আশ্চর্য নয়। কিন্তু তবু মানুষ তাকে ধরতে ছাড়ে না— কারণ এ কাঁকড়া খেতে নাকি অতি চমৎকার! তার পায়ে এত চর্বি যে সেই চর্বি গলিয়ে সে দেশের লোকেরা তেল বার করে রাখে। তার উপর যে দেশের বুনো শুয়োরগুলোরও কেমন বদভ্যাস— তারা গর্ত খুঁড়ে এই কাঁকড়াদের বার করে খেয়ে ফেলে।

রাক্ষুসে কাঁকড়ার মতো বড় না হলেও, এগুলিও নেহাৎ ছোট নয়। একবার এইরকম একটা কাঁকড়াকে একটা মজবুত টিনের বাক্সে বন্ধ করে বাক্সটাকে তার দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন দেখা গেল, কাঁকড়াটা বাক্সের ধার মুচড়িয়ে ফাঁক করে তা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।

এই লেখাটি বার পড়া হয়েছে