ধাঁধা ও হেয়ালি


বৈশাখেতে বছর বছর দেখ্‌তে পাবে তারে
দেখবে আবার শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি জলধারে!
দেখবে তারে রবির গায়ে দেখ্‌বে তারে পূবে
দেখবে তারে বনবাদাড়ে ডোবার জলে ডুবে।
মিথ্যা খোঁজ আকাশ পাতাল মিথ্যা খোঁজ ঘরে
অমাবস্যার বাইরে গিয়ে খুঁজবে ভাল ক'রে।


ছুঁচল মাথা ঠোঁটটি কাটা হেঁট মুখেতে চলে,
কালো পানির ধারে এসে মুণ্ডু ডোবায় জলে।


হাঁ-করা মুখ জিভ লক্‌ লক্‌ ঠোঁটের উপর দড়ি,
ক্যাক্‌ ক'রে ভাই কামড় দিবে ঠ্যাঙ্গের গোড়া ধরি।


রংবেরঙের দেহের ঢঙে ল্যাজের কিবা ছিরি
নাকটি তুলে হেলে দুলে ফড়্‌ফড়িয়ে ফিরি।
উড়ে বেড়াই পৈতা গলায় বাতাসে হাল ছেড়ে
আপন জ্ঞাতির দেখা পেলেই কাট্‌তে যাব তেড়ে।


কলের মধ্যে পা দিয়েছ তাইত আমায় পেলে
বিপদ হলে দোষটা সবাই আমার ঘাড়েই ফেলে।
ফেল না মোর মুণ্ডু কেটে তবুও লাগি কাজে
আমায় তুলে ছুটবে তরী পদ্মানদীর মাঝে।


আগে ডাকি আয় আয় শেষে করি মানা
উল্টা স্বভাব মোর আছে তোর জানা!
নূতন শিখায়ে কেবা ঠকাইবি মোরে।
যা দেখাবি ফিরে তাই দেখাইব তোরে।।


ভয়ানক নেমন্তন্ন!

মাগো
কাল আমি খেয়েছি শোন, কি ভয়ঙ্কর নেমন্তন্ন—
জলে থাকে একটা জন্তু দেখ্‌তে সে ভয়ানক কিন্তু!
লম্বা লম্বা দাড়ি রাখে, লাঠির আগায় চোখ থাকে;
তার যে কতকগুলো পা ঢের লোকে তা জানেই না;
দুটো পা যে ছিল তার—বাপ্‌রে সেকি বলব আর!
চিম্‌টি কাটত তা দিয়ে যদি ছিঁড়ে নিত নাক অবধি!
তার মাথাটা কচকচিয়ে খেয়েছিলাম মুলো দিয়ে!—
আর একটা সে কিসের ছা নাইক মাথা নাইক পা!
কিন্তু তার মাকে জানি তার আছে পা দুখানি!—
আরেকটা সে কি যে ছিল খেতে খেতে পালইয়ে গেল!


কাজ নিয়ে শুরু করি শেষ মোর জলে,
আগে পিছে কাল মোর সাথে সাথে চলে।
তবু যদি নাহি বোঝ আরো রাখ শুনে,
চোখে চোখে রাখে লোকে কহ কোন্‌ গুণে?


মানুষ নহি—ঘাঘরা ঘেরা দেহের কিবা ছিরি
ময়ূর নহি বাদল দিনে পেখম ধ'রে ফিরি।
সাহেব লাটে আমার সাথে বেড়ায় হাতে ধ'রে,
কদর বুঝে আদর ক'রে মাথায় রাখে মোরে।

১০
দেখেছি তারে রাস্তা ঘাটে বুঝিনে তার কথা—
কাটলে মাথা শোনায় বুলি কেমন ধারা প্রথা!
পেট কাটলে কালো বরণ লেজ কাটলে কাবু
এমন জীবে চিনলে তবে সাবাস বলি বাবু।

১১
এই লেখাগুলো চটপট্‌ পরে ফেল ত—
     এলে খাপড় তেনাপার লেবুঝ বতুমিচা লাকন ও।
     ঘরায়ঙ্গা ডারমীকু লেজ
     রবা কয়যায় লাতল বেড়ানে।

১২
লাউ নয় সে কুমড়াও নয় কিন্তু চালে থাকে
দেখবে তারে নদীর চরে কিম্বা খাঁচার ফাঁকে,
কাঁচায় পচায় সদাই দেখি পাকতে নাহি শুনি
চশমা চোখে খুঁজতে গিয়ে ডবল ক'রে শুনি।।

১৩
সেছেকিখাঁচী
দেড়েথাবাদা
শেছেরংনাদে
শে
চংকিট্যায,
থাফিংবারা
লিটিফংঢংচোলো
খিকি
লিটিফংঢংচোলো
খিকি

১৪
এক ভদ্রলোককে একটি ছেলে তাঁর বয়স জিজ্ঞাসা করেছিল। তিনি তার উত্তর দিলেন এই রকম
      তোর যে দিনে জন্ম তখন আমার বয়স খানি,
      এখনকার তোর বয়সের সমান ছিল জানি।
      আরো বলি হোক না ক্রমে চৌদ্দ বছর গত,
      তোর বয়সটি হবে আমার এই বয়সের মত।।

বল তো ভদ্রলোকটির বয়স কত?

১৫
তিনটি অক্ষরে তার কপালে আগুণ,
লেজ কেটে গান গায় গুন গুন গুন।
পেট বাদে পায়ে বেড়ি ঠুন ঠুন বাজে,
মাথা কেটে গাছ হয়ে থাকে বন মাঝে।।

১৬
মাস্টার মশাইকে জিজ্ঞাসা করলাম তাঁর ছাত্র ক'জন ।
তিনি বললেন, "অর্ধেক ছেলে পড়ে, সিকি ভাগ ছেলে চুপ ক'রে
বসে থাকে, সাত ভাগের এক ভাগ গল্প করে, বাকি
তিনটি ছেলে ঘুমায়।"
বল তো তাঁর ক্লাশে কয়টি ছেলে?

১৭
পা দেখি তার সবার আগে, কোথায় রে তার মাথা?
কেবল দেখি ঠ্যাঙের সাথে হাড্ডি আছে গাঁথা!
সামনে পিছে পাড়ের বাহার শুনতে লাগে ধাঁধা,
হরেক দেশে দেখবে তারে পাথর দিয়ে বাঁধা।

১৮
তিনটি অক্ষরে নাম, বুদ্ধি খরধার
মুড়ো বায়ে গুণে দেখি লক্ষ রূপ তার।
শেষ ছাড়ি উচ্চে বাস মাথার উপরে
আদি অন্তে মিলে আহা কত মধু ধরে!

১৯
সূর্যের প্রসাদে আমি সবা সাথে ঘুরি
সারাদিন কত রূপে কত লুকোচুরি।
কখনো দখিনে বামে কভু আগে পিছে
বিনয়ে লুটাই সদা চরণের নীচে।
তপন পশ্চিমে যায় আমি যাই পুবে
আপনি লুকায়ে মরি সে যখন ডুবে।

২০
এই দালানে লুকিয়ে আছে এই ত শুধু জানা—
তার অভাবে জানালা নাই ঘর করেছে কানা।
তায় ফেলে ভাই এক হলেও একলা তবু নই,
গাল দিয়ে তার নাগাল পাব স্পষ্ট কথা কই।
দেখছ মিছে ঘরের নীচে, চালার পিছে খোঁজ
চালাক লোকের মধ্যে থাকে—সহজ কথা বোঝ।
তাও যদি না বুঝতে পার পায়ের দিকে চাও,
'পালা পালা' রবটি তুলে দেখতে তারে পাও।

এই লেখাটি বার পড়া হয়েছে